তথ্য অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - গণিত - | NCTB BOOK
38
38

তথ্য অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ

মিতুদের স্কুলে হেডমিসট্রেস ম্যাডাম আজ সমাবেশের সময় ঘোষণা দিলেন সব ক্লাসের জন্য খেলাধুলোর সরঞ্জাম কেনা হবে। সবাই একটা আনন্দের শব্দ করলো। কিন্তু তারপর ম্যাডাম বললেন, "এখনই খুশি হয়ে যেও না। খেলার সরঞ্জাম তো অনেক রকমের, কোনগুলো কিনে নিয়ে আসবো তা তো তোমরা বলো নাই। নাকি আমি যা কিনে আনবো তা-ই নিবে?" সবাই বলে উঠলো, "না ম্যাডাম, না! আমরা পছন্দ করার সুযোগ চাই!" ম্যাডাম বললেন, "ঠিক আছে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সমস্যা তাহলে তোমরাই সমাধান করবে।"

প্রথম পিরিয়ডে রফিক স্যারের গণিত ক্লাস। স্যার ক্লাসে এসেই বললেন, "তোমাদের ক্লাসের খেলাধুলোর সরঞ্জামের কাজটা সেরে ফেলা দরকার, কী বলো?” সবাই উল্লাস করে উঠলো, "জ্বি স্যার!" স্যার বললেন, "তাহলে বলো দেখি কিসের কিসের সরঞ্জাম কেনা যায়?" রায়হান বললো, "স্যার, ক্রিকেট ব্যাট আর বল!" সুমি বললো, "স্যার, দড়ি লাফ!" নয়ন বললো, "একটা ফুটবল লাগবে, স্যার!” জিনাত আর বিথী বললো, "আমাদের একটা লুডো সেট চাই, স্যার!" মহিম আর কৌশিক বললো, “তাহলে একটা দাবা সেট থাকলেও বেশ হয়, স্যার!”

উত্তেজনায় কেউ খেয়াল করেনি যে ছেলে-মেয়েরা যা যা বলছে স্যার এক এক করে বোর্ডে লিখে যাচ্ছেন। এবার স্যার বললেন, "এর বাইরে আর কিছু চাই?” মিতু কাঁচুমাচু করে বললো, "স্যার, একটা ব্যাডমিন্টন সেট স্কুলে পেলে খেলতাম। " স্যার হেসে মিতুর ব্যাডমিন্টন-ও লিখে দিলেন বোর্ডে। তারপর বললেন, "আমি মোটামুটি একটা ধারণা করতে পারছি তোমরা কী কী চাও। কিন্তু সপ্তম শ্রেণীর জবা ক্লাসের জন্য কোন গুলো হেডমিসট্রেস ম্যাডামকে দিবো, তার একটা পাকা তথ্যতালিকা দরকার, বুঝলে?”

এই বলে স্যার বললেন, "আচ্ছা, দেখি ক্রিকেট সেট-এর জন্য কত জন হাত তুলবে?” দশ জন হাত তুললো। স্যার ক্রিকেটের ঘরের উপর দশটি তারা এঁকে দিলেন। তারপর বললেন, "ফুটবল?” শিক্ষার্থীরা হাত তুললো। এমন করে একে একে সব খেলার ঘরেই তারা আঁকা হয়ে গেলে যা দাঁড়ালো তা দেখতে খানিকটা পাশের ছবির মত।

স্যার বললেন, "বাহ, বেশ হলো! দেখলে তো সবাই মিলে কেমন একটা ছক বানিয়ে ফেললাম! এবার বলো দেখি কী বোঝা যাচ্ছে?" মিশু ক্লাসের বিজ্ঞানী। ও বললো, "স্যার, আমাদের ক্লাসের সবাই ক্রিকেট সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে।" স্যার বললেন, "বাহ মিশু! ব্রিলিয়ান্ট! তোমরা বলো তো মিশু এটা কীভাবে বুঝলো?” মিতু মন খারাপ করে বললো, "স্যার, ক্রিকেটের ঘরে সবচেয়ে বেশি তারা। সবাই ক্রিকেটের বেলায় হাত তুলেছে। আর ব্যাডমিন্টনের ঘরে সবচেয়ে কম, মাত্র দু'টো। আমি আর আরেকজন ছাড়া কেউ ব্যাডমিন্টন খেলতে চায় না। " স্যার বললেন, "ঠিক বলেছো তো! মন খারাপ করছো কেন তাহলে?" রবিন পাশ থেকে বললো, "স্যার, মিতু ভেবেছে কম ভোট পড়ার কারণে ব্যাডমিন্টন সেট কেনা হবে না!” স্যার হো হো করে হেসে উঠলেন, "আরে না না, হেডমিসট্রেস ম্যাডাম বলে দিয়েছেন, এক জনও যদি চায়, তাহলেও সেই সরঞ্জাম কেনা হবে। কোন চিন্তা নেই মিতু!" তখন মিশু দাঁড়িয়ে বললো, "স্যার, আমি তাহলে চাই ক্লাসে একটা ম্যাগনিফাইং গ্লাস থাকুক। তাহলে ফুটবলে লিক হলে আমি দেখে দিতে পারবো!" স্যার বললেন, "বেশ তো! বিজ্ঞানের সরঞ্জাম কেনার সময় মনে করে বলো। আজকে কেবল খেলার গুলো জেনে নিই" সবাই হেসে উঠলো

এখন শোন। যখন তোমাদের থেকে একদম শুরুতে জানতে চাইলাম, কী কী খেলতে চাও, তোমরা আমাকে যা যা বললে, সেগুলো হলো তথ্য। এমন তথ্য সংগ্রহ করা কেন দরকার? মনে কর আমি মুখে মুখে জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা সবাই যে যা চাইছো সেটাই বললে। তাতে একটা ভাসা ভাসা ধারণা পাওয়া যেত। অর্থাৎ তোমাদের চাহিদাগুলো জানার ক্ষেত্রে একটা ফাঁক থেকে যেত।

সংগ্রহ করেই অবশ্য কাজ শেষ নয়। তরিতরকারি বাজার থেকে নিয়ে এসেই যেমন খেয়ে ফেলি না, সেগুলোকে রান্না করতে হয়, তারপর সেগুলো খাবার যোগ্য হয়। তেমনই সংগৃহিত তথ্যগুলোকেও আমাদের প্রক্রিয়াজাত করতে হবে। তাই আমরা তথ্যগুলোকে একটা ছকে বসিয়ে বিন্যস্ত করলাম, অর্থাৎ সাজালাম। তখন কিছুক্ষণ আগে সংগ্রহ করা তথ্যগুলো আমাদের সামনে অর্থপূর্ণ উপাত্ত হয়ে উঠলো। আমরা বুঝতে পারলাম আমাদের চাহিদাটা কী।

উপাত্তকে প্রক্রিয়াজাত করলে আমাদের সামনে সেগুলো অর্থপূর্ণ তথ্য রূপে ফুটে উঠে। এই উপাত্তগুলি দেখে আমরা একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি। তোমাদের ক্লাসে খেলার সরঞ্জাম নিয়ে এই কাজটা করবে নাকি? সবাই চাহিদা এবং মতামত নিয়ে এমন একটি উপাত্ত সারণি বানিয়ে দাবি নিয়ে গেলে তোমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান নিশ্চয়ই না করবেন না, তাই না?

এবার একটু চিন্তা করে বলতে পারো, খেলার সরঞ্জাম নিয়ে আমরা যে তথ্যগুলো পেলাম সেগুলো কোন ধরণের তথ্য? পরিমাণগত নাকি গুণগত? আচ্ছা আরেকটু সাহায্য করি- পরিমাণগত তথ্যকে গাণিতিক সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা যায়। আর গুণগত অর্থ হলো বর্ণনামূলক, এদের মাঝে সংখ্যাবাচক কোন কিছু থাকে না, এদের পরিমাণ পরিমাপ করা যায় না। এখন চিন্তা করে নিচের একক কাজটি করো:

৭.১ নং ছকটিতে যে প্রকারের তথ্য আছে বলে মনে করো, নিচের ছকে তার বাম পাশের ঘরে টিক চিহ্ন (√) বসাও। ডান পাশের দু'টি ফাঁকা ঘরেই তোমার সিদ্ধান্তের একটি করে কারণ লেখো।

টিক চিহ্ন

তথ্যের প্রকার

কারণ

 

গুণগত

 

 

পরিমাণগত

 

শিক্ষকের থেকে সঠিক উত্তর আর তার কারণটা জেনে নিও। এই পর্যায়ে আমরা জানলাম যে তথ্য মূলত দুই প্রকারঃ গুণগত আর পরিমাণগত। এর মাঝে পরিমাণগত তথ্য আবার দুই প্রকার। নিচের ছকে দেখে নিই সেগুলো কী কী।

পরের কাজগুলো করার জন্য তোমাদের কাছে বিচ্ছিন্ন আর অবিচ্ছিন্ন পরিমাণগত তথ্যের ধারণা পরিষ্কার হওয়া দরকার। দু'টোই সংখ্যাবাচক তথ্য, তবে দুইয়ের মাঝে কিছু পার্থক্য আছে

প্রথমে বিচ্ছিন্ন তথ্য নিয়ে বলি। নাম শুনেই বুঝা যাচ্ছে এই ধরণের তথ্যগুলো এককভাবে থাকে, সংযুক্ত বা ধারবাহিকভাবে থাকে না। বিচ্ছিন্ন তথ্যের মূল বৈশিষ্ট্য হলো সময়ের সাথে এগুলো পরিবর্তনশীল নয়, অনেকগুলো পরিমাপের সংখ্যা-ও একত্রে সম্মিলিত নয়। এই সংখ্যাবাচক উপাত্তগুলো পূর্ণসংখ্যা বা ভগ্নাংশ উভয়ই হতে পারে। যেমন: আমাদের স্মৃতি সৌধের উচ্চতা ১৫০ ফিট এবং প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা ঠিক ৩০০ মিটার। আবার আমাদের পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। এক্ষেত্রে খেয়াল করো, স্মৃতি সৌধ এবং আইফেল টাওয়ার-এর উচ্চতা বা পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য একটাই হতে পারে। আমরা এগুলো যতবারই পরিমাপ করি, এগুলোর সংখ্যাগত মান পরিবর্তন হবে না। আরো আছে। তোমার বর্তমান জুতার নম্বর, এই বছর তোমার ক্লাসের মোট শিক্ষার্থিদের সংখ্যা, তোমার স্কুলে মোট সিঁড়ির সংখ্যা, ইত্যাদি। নিচের ছকে তুমি কি আরও তিনটি বিচ্ছিন্ন তথ্যের উদাহরণ লিখতে পারবে?

বিচ্ছিন্ন তথ্য

এবার আসি অবিচ্ছিন্ন তথ্যে। অবিচ্ছিন্ন তথ্যের মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর মান স্থির নয়, এই তথ্য যে কোন মান গ্রহণ করতে পারে। যেমন: এক দিনের তাপমাত্রা। চিন্তা করে দেখো, সকালে যখন স্কুলে এসেছো, তখনকার তাপমাত্রা আর দুপুরের তাপমাত্রা কি এক? আবার দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হলে তখন কি এক থাকে? দুপুরে ঝমঝম বৃষ্টি আর বিকেলের মিঠে রোদেলা আবহাওয়ায় তাপমাত্রা ভিন্ন হয় না? তাহলে একই দিনের তাপমাত্রা বলতে গেলে তোমার অনেকগুলো তথ্য একত্র করতে হবে। আরও উদাহরণ আছে, এক বছরে একটি গাছের উচ্চতা, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদনের পরিমাণ, ইত্যাদি। তুমি কি নিচের ছকে তিনটি অবিচ্ছিন্ন তথ্যের উদাহরণ দিতে পারবে?

অবিচ্ছিন্ন তথ্য

একক কাজ

এবার এসো একটি একক কাজ করি। এই কাজটি তথ্যের প্রকারভেদ নিয়ে সব ধারণা পরিষ্কার করে দিবে। এবারও বিভিন্ন উপাত্ত দিয়ে তোমার একটি ছক পূরণ করতে হবে। উপাত্তগুলোকে প্রক্রিয়াজাত করলে সেগুলি তথ্যে রূপান্তর হবে। এক্ষেত্রে আমরা সংগৃহীত উপাত্তগুলোকে প্রক্রিয়াজাতকরণ বলে ধরে নিবো। নিচের ছকে ইতমধ্যে শ্রেণিবদ্ধ হয়ে থাকার কারণে আমরা উপাত্তগুলোকে তথ্য (Information) বলেই সম্বোধন করব। তথ্যগুলো তোমার বাসা আর স্কুল থেকেই সংগ্রহ করতে পারবে। নির্দিষ্ট ফাঁকা ঘরে সংগৃহীত তথ্য বসাও এবং সঠিক তথ্যের প্রকারে টিক চিহ্ন (√) দাও।

একক কাজ

কাজটিতে তথ্য সংগ্রহ করে নিশ্চয়ই মজা পেয়েছো। এবারে আরেকটু কাজ বাকি। কী উপায়ে তথ্যগুলো সংগ্রহ করেছো, সেগুলো জানা দরকার। নিচের ছকে তথ্য সংগ্রহের কিছু উপায় বলে দেওয়া আছে, কোন কোন উপায় তুমি ব্যবহার করেছো, তার ডান পাশে ফাঁকা ঘরে টিক চিহ্ন (√) দাও। এগুলো ছাড়াও অন্য কোন উপায় ব্যবহার করলে বাকি ফাঁকা ঘরে লেখো।

উপরের দেখানো উপায় গুলো ছাড়াও তথ্য সংগ্রহের আরও উপায় আছে। যেমন: সাক্ষাতকার গ্রহণ, প্রশ্নমালা ব্যবহার করা, নির্দিষ্ট দলের সাথে আলোচনা করা ইত্যাদি। তথ্য সংগ্রহের কাজ সব সময় সহজ হয় না। অনেক সময় একটি তথ্য একাধিক উপায়ে একাধিক উৎস থেকে সংগ্রহ করতে হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে উপাত্ত বা তথ্য সংগ্রহ বেশ সময় ও ব্যয় সাপেক্ষ হয়ে থাকে।

একক কাজটিতে তথ্য সংগ্রহের প্রাথমিক ধারণা অর্জন করেছো নিশ্চয়ই। আমাদের পরবর্তী কাজ হলো একটি দলগত প্রকল্প। প্রকল্পের বিষয়বস্তু, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা এবং সহায়ক ধারণাসমূহ নিচেই দেওয়া আছে।

দলগত কাজ

১। শিক্ষকের সাহায্য নিয়ে সম্পূর্ণ ক্লাসকে ৫টি দলে ভাগ করা হবে। প্রতিটি দল একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করবে। প্রকল্পগুলো হলো:

ক. সহপাঠীদের প্রিয় রঙ 

খ. সহপাঠীদের প্রিয় খাবার 

গ. সহপাঠীদের উচ্চতা 

ঘ. এক মাসের জন্য ক্লাসের প্রতিদিনের অনুপস্থিত শিক্ষার্থির সংখ্যা 

ঙ. সহপাঠীদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা

২। তুমি কোন প্রকল্পের অংশ হচ্ছো তা ফাঁকা ঘরে লেখো: 

৩। তোমার দলে সদস্য সংখ্যা কত জন তা ফাঁকা ঘরে লেখো: 

৪। উপাত্ত সংগ্রহের পরিকল্পনা:

ক্রমিক নং.

বিষয়

প্রস্তাবনা

উপাত্তের উৎস

 

উৎস নির্বাচনের যুক্তি

 

উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যম

 

মাধ্যম নির্বাচনের যুক্তি

 

উপাত্তের ধরণ

 

উপাত্তের ধরণ নির্ধারণের যুক্তি

 

উপাত্ত সংগ্রহের তারিখ

 

উপাত্ত শেণিবদ্ধকরণের তারিখ

 

উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের তারিখ

 

১০

প্রক্রিয়াকৃত উপাত্ত উপস্থাপনের ধরণ

 

১১

উপস্থাপনের ধরণ পছন্দ করার কারণ

 

১২

চুড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দানের তারিখ

 

এবার তাহলে জেনে নাও তোমার দলের কাজ গুলো কী কী। উপরের পরিকল্পনা অনুযায়ী নিচের ধাপ গুলো সম্পন্ন করো।

১। তথ্য সংগ্রহের উপকরণ তৈরি করো। 

২। তথ্য সংগ্রহ করো। 

৩। নিচের দু'টি থেকে একটি প্রযোজ্য পদ্ধতি ব্যবহার করে সংগৃহীত উপাত্তগুলো গণসংখ্যা নিবেশন সারণিবদ্ধ করো

ক. স্বল্পসংখ্যক বিচ্ছিন্ন বা গুণবাচক উপাত্ত গণনা করার ক্ষেত্রে সরাসরি টালিচিহ্ন ব্যবহার করে গণসংখ্যা নির্ণয় করো

খ. অধিকসংখ্যক অবিচ্ছিন্ন উপাত্তের ক্ষেত্রে 

i) পরিসর নির্ণয় করো; 

ii) শ্রেণিব্যপ্তি নির্ণয় করো; 

iii) শ্রেণিসংখ্যা নির্ণয় করো; এবং 

iv) টালিচিহ্ন ব্যবহার করে গণসংখ্যা নির্ণয় করো।

৪। নিচের তিনটি পদ্ধতির মাঝে প্রযোজ্য পদ্ধতিটি ব্যবহার করে তোমার গণসংখ্যা নিবেশনের লেখচিত্র উপাস্থাপন করো

ক. রেখাচিত্র 

খ. আয়তলেখ 

গ. পাইচিত্র

৫। একটি প্রতিবেদন তৈরি করো। প্রতিবেদনে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারোঃ

ক. তোমাদের প্রকল্পটির উদ্দেশ্য কী? 

খ. প্রকল্পটির জন্য কী তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা প্রয়োজন? 

গ. কী পদ্ধতিতে কোন উৎস থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছো? এই উৎসটিই কেন সঠিক মনে করলে?

ঘ. কী উপায়ে উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ করেছো? প্রক্রিয়াকরণের প্রতিটি ধাপ দেখাও। 

ঙ. প্রক্রিয়াকৃত উপাত্তের লেখচিত্র উপ্সথাপন করো। যে ধরণের লেখচিত্র বেছে নিয়েছো, তার কারণ কী? 

চ. প্রক্রিয়াকৃত তথ্য হতে তোমরা কী সিদ্ধান্ত নিলে, লেখো।

এই পর্যায়ে তোমার দলের সাথে তুমি উপাত্ত এবং তথ্য সংগ্রহ আরম্ভ করতে পারো। উপাত্ত-তথ্য সংগ্রহের পর তোমার সেগুলো প্রক্রিয়াকরণ করতে হবে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে তোমরা জেনেছো যে এই উপাত্ত এবং তথ্যগুলো পরিসংখ্যানিক কাজের অংশ। তাই এর প্রক্রিয়াকরণও পরিসংখ্যানিক উপায়ে হওয়া প্রয়োজন। পরিসংখ্যানিক উপায়ে তথ্য এবং উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ করার আগে তোমাদের মূল কিছু ধারণা আর পদ্ধতি সম্পর্কে জানা দরকার। এই অধ্যায়ের বাকি অংশে সেগুলি ব্যাখ্যা করা হলো। এক্ষেত্রে শিক্ষক তোমাদের সাহায্য করবেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিবেন। মনে রাখবে, তোমার প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য এই ধারণাগুলো বার বার দেখে নিতেও দোষ নিই। তবে ধারণাগুলো পরিষ্কার হওয়ার জন্য তোমাদের কিছু কিছু একক কাজ করতে হবে।

উপাত্তের উপস্থাপন

তোমরা ইতিমধ্যেই জেনেছ, সংখ্যাসূচক তথ্যাবলি পরিসংখ্যানের উপাত্ত। এসকল উপাত্ত সাধারণত অবিন্যস্তভাবে থাকে এবং অবিন্যস্ত উপাত্ত থেকে সরাসরি প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। এজন্য উপাত্তগুলোকে বিন্যস্ত বা সারণিভুক্ত করার প্রয়োজন হয়। ষষ্ঠ শ্রেণিতে তোমরা অবিন্যস্ত উপাত্তকে মানের ক্রমানুসারে সাজিয়ে বিন্যস্ত করা শিখেছ। এ অধ্যায়ে অবিন্যস্ত উপাত্তকে কীভাবে শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে সারণিভুক্ত করে বিন্যস্ত করা যায়, তা জানার চেষ্টা করবো।

কোনকিছু শ্রেণিবিন্যাস করার অর্থ কী? মনে করো তোমারা ক্লাসে ৪০ জন শিক্ষার্থী আছো। তোমরা সকলে একসাথে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে পড়ে যে যেখানে খুশি বসে পড়লে কেমন একটা এলোমেলো দেখায় না? শ্রেণিকক্ষটি অবিন্যস্ত হয়ে থাকে। কিন্তু প্রত্যেকের জন্য একটা বেঞ্চ বা সিট বরাদ্দ করে দিলে, সারিবদ্ধভাবে সবাই সুন্দর করে বসলে গোছানো লাগে, নিয়মতান্ত্রিক মনে হয়। সবাই নিজেদের বরাদ্দকৃত স্থানে বসলে শ্রেণিকক্ষটি বিন্যস্ত দেখায়। উপাত্তের ক্ষেত্রেও এমন। অনেকগুলো সংখ্যা এলোমেলো বসিয়ে রাখলে তার থেকে কোন অর্থ উদ্ধার করা যায় না। কিন্তু, উপাত্তের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে সুবিধাজনক ব্যবধান নিয়ে উপাত্তকে কতগুলো শ্রেণিতে বিভক্ত করলে তা বিন্যস্থ থাকে, এবং তা বিশ্লেষণ করা সহজ হয়। এই বিন্যস্ত করার প্রক্রিয়াই শ্রেণিবিন্যাস। চলো নিচের প্রশ্ন দুটোর উত্তর খুঁজি।

• উপাত্ত কী প্রক্রিয়ায় শ্রেণিবিন্যাস করা যায়? 

• এই অধ্যায়ের কোনো পর্যায়ে কি উপাত্ত শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে?

গণসংখ্যা নিবেশন সারণি (Frequency Distribution Table)

শ্রেণিবিন্যাস করার মাধ্যমে অবিন্যস্ত উপাত্তকে বিন্যস্ত করার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হলো গণসংখ্যা নিবেশন সারণি তৈরি করা। গণসংখ্যা নিবেশন সারণি তৈরির নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নিই। অসন্ধানকারী বা গবেষকগণ নিজেদের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে গণসংখ্যা নিবেশন সারণি তৈরি করে থাকেন। চলো, একটি সহজ উদাহরণ দিয়ে দেখে নিই কীভাবে এই সারণি তৈরি করা যায়।

মনে করো, তোমাদের ক্লাসের শিক্ষার্থীরা সকালের নাস্তায় কি খেতে পছন্দ করে শিক্ষক তা জানতে চান। সকালের নাস্তায় অনেক কিছুই খাওয়া যায়, তবে এই ক্ষেত্রে আমরা কেবল ভাত, রুটি আর চা-বিস্কুটের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকবো। শিক্ষক ক্লাস ক্যাপটেন মাহিরকে তথ্যগুলো সংগ্রহ করার দায়িত্ব দিলেন। মাহির প্রথমে গেলো শরীফের কাছে জিজ্ঞেস করতে, শরীফের পছন্দ ভাত, মাহির ভাতের ঘরে পেনসিল দিয়ে একটি দাগ দিলো। মিতুর পছন্দ চা-বিস্কুট, সেই ঘরে পড়লো আরেকটি দাগ। এমন করে ক্লাসের ৪০ জন শিক্ষার্থীর প্রতিজনের বিপরীতে তাদের পছন্দ অনুযায়ী একটি করে দাগ দিলো। সব উপাত্ত সংগ্রহ করে দিয়ে নিচের ছকের মত করে শিক্ষকের কাছে উপস্থাপনের করল।

প্রতিটি দাগকে আমরা ট্যালি (Tally) বলে থাকি। ছকটিতে খেয়াল করে দেখো, প্রতিটি ট্যালি এক এক জন শিক্ষার্থীর উপাত্ত নির্দেশ করে। অন্যভাবে বললে প্রতিটি ট্যালি গণনার একটি করে সংখ্যা নির্দেশ করে। তাই প্রতিটি ট্যালি একেকটি গণসংখ্যা।

গণসংখ্যা কী জানার পর প্রীতি মাহিরের লেখা কাগজটিতে আরেকটি কলাম করে ভাত, রুটি এবং চা-বিস্কুটের প্রতিটির বিপরীতে মোট কয়জনের উপাত্ত পাওয়া গেলো তা দেখতে চাইলো। নতুন কলামটির নাম দিলো গণসংখ্যা বা শিক্ষার্থীর সংখ্যা।

এবার শিক্ষক বললেন, মাহির যে ট্যালি ব্যবহার করে গণনা করেছে, গণসংখ্যা গণনা করার জন্য সেটি সঠিক একটি পদ্ধতি। কিন্তু ট্যালি ব্যবহার করেই আরও সহজে গণনা করার একটি উপায় আছে

১ – ৪ পর্যন্ত ট্যালি চিহ্নগুলো আমরা নিম্নরূপে দিতে পারি।

কিন্তু ৫ম ট্যালি চিহ্নটি চারটি চিহ্ন জুড়ে আড়াআড়িভাবে দিতে হয়, যা নিম্নরূপঃ

তাই, ট্যালি গণনা করতে গিয়ে যখনই  এমন কিছু দেখবে, সেটিকে ৫ বলে ধরে নিবে। একইভাবে (৬৯) পর্যন্ত ট্যালি চিহ্নগুলো নিম্নরূপ হবে–

তাহলে এবার চট করে ২৯ গণসংখ্যাটিকে ট্যালি করে দেখাও নিচের ফাঁকা ঘরে।

তাহলে মাহির ও প্রীতির তৈরি করা সারণিটি আমরা নিম্নরূপে উপস্থাপন করতে পারি

সারণি থেকে দেখা যায় যে, ঐ ক্লাসের সবচেয়ে বেশি ১৭ জন শিক্ষার্থী সকালের নাস্তায় রুটি এবং সবচেয়ে কম ৭ জন চা-বিস্কুট পছন্দ করে।

একক কাজ:

তোমার ক্লাসের সকল শিক্ষার্থীর রক্তের গ্রুপ সংগ্রহ করো। তারপর নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

ক. গণসংখ্যা নিবেশন সারণি তৈরি করে তথ্যগুলো উপস্থাপন করো। 

খ. কোন গ্রুপের রক্ত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীর রয়েছে? 

গ. কোন গ্রুপের রক্ত সবচেয়ে কম সংখ্যক শিক্ষার্থীর রয়েছে?

এই পর্যন্ত আমরা একটি সহজ গণসংখ্যা নিবেশন সারণি নিয়ে কাজ করলাম। এই সারণিতে উপাত্তের সংখ্যা কম, তাই এর ব্যবস্থাপনায় কম সময় লাগে। এ ছাড়াও এই সারণিতে অবস্থিত তথ্যগুলো বিচ্ছিন্ন। বিচ্ছিন্ন তথ্য কি মনে আছে তো? যা হোক, অবিচ্ছিন্ন তথ্যের গণসংখ্যা নিবেশন সারণি একটু ভিন্ন। চলো নিচের উদাহরণটি থেকে প্রথমে জেনে নিই, কীভাবে অবিচ্ছিন্ন উপাত্তের গণসংখ্যা নিবেশন সারণি তৈরি করা যায়। যদি তথ্য বা উপাত্তের সংখ্যা বেশি এবং অবিচ্ছিন্ন হয় তবে উপাত্তসমূহকে উপরের নিয়মে উপন্থাপন করা কঠিন ও সময় সাপেক্ষ্য হয়।

মনে করো কোনো ৬০ জন শ্রমিকের ঘণ্টাপ্রতি মজুরি (টাকায়) নিচে দেওয়া হলো:

৫০, ৪০, ৫৮, ৪৫, ৫৫, ৪৮, ৫২, ৬০, ৪২, ৫৫, ৪৫, ৬২, ৬১, ৫৭, ৫৮, ৬১, ৪২, ৪৩, ৫০, ৪৪, ৩৭, ৫৭, ৪৩, ৬২, ৫৩, ৪৩, ৪২, ৪৫, ৫১, ৫৪, ৬২, ৩৮, ৩৭, ৪৯, ৫৫, ৬৪, ৫৫, ৬০, ৬১, ৪০, ৩৮, ৩৪, ৪১, ৩৬, ৩৮, ৫১, ৩৮, ৬২, ৪৫, ৪৭, ৫২, ৩৯, ৫১, ৩৩, ৪৯, ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৫০, ৫৫।

তুমি যদি প্রত্যেকের ওজনের জন্য গণসংখ্যা নিবেশন সারণি তৈরি করতে চাও, তাহলে সারণিটি অনেক বড় হবে এবং তা তৈরি করতে অনেক সময় লাগবে। আবার ভুল হওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়। এক্ষেত্রে শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে অবিন্যস্ত উপাত্তসমূহ তুমি অতি সহজে বিন্যস্ত করতে পারবে এবং গণসংখ্যা নিবেশন সারণির মাধ্যমে উপস্থাপন করা তোমার জন্য সহজতর হবে।

অবিচ্ছিন্ন তথ্যের গণসংখ্যা নিবেশন সারণি তৈরি করার জন্য সাধারণত নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করা হয়।

১. পরিসর (Range) নির্ণয়ঃ

কোনো উপাত্তের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মানের পার্থক্যকে আমরা পরিসর বলতে পারি। তাহলে, পরিসর নির্ণয়ের সূত্রটি হবে = (সর্বোচ্চ মান সর্বনিম্ন মান) + ১

উপাত্তের সর্বোচ্চ নম্বর ৬৫ এবং সর্বনিম্ন নম্বর ৩৩

সুতরাং উপাত্তের পরিসর = (৬৫ ৩৩)+ ১ = ৩৩

শ্রেণিব্যাপ্তি (Class Interval) নির্ণয়ঃ

যেকোনোাে অনুসন্ধানলব্ধ উপাত্তের পরিসর নির্ণয়ের পর প্রয়োজন হয় শ্রেণিব্যাপ্তি নির্ধারণ। সেজন্য উপাত্তগুলোকে সুবিধাজনক ব্যবধান নিয়ে কতকগুলো শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। উপাত্তের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে এগুলো সাধারণত ভাগ করা হয। শ্রেণিতে ভাগ করার নির্ধারিত কোনো নিয়ম নিই। তবে প্রত্যেক শ্রেণির একটি সর্বোচ্চ ও একটি সর্বনিম্ন মান থাকে। যেকোনোরে শ্রেণির সর্বনিম্ন মানকে এর নিম্নসীমা এবং সর্বোচ্চ মানকে এর উচ্চসীমা বলা হয়। আর যেকোনোাে শ্রেণির উচ্চসীমা ও নিম্নসীমার ব্যবধান হলো সেই শ্রেণির শ্রেণিব্যাপ্তি। উদাহরণস্বরূপ, ১ – ১০, ১১–২০, ২১ – ৩০ ইত্যাদি হলো এক-একটি শ্রেণি। এখানে ১ – ১০ শ্রেণির নিম্নসীমা ১ এবং উচ্চসীমা ১০। শ্রেণিব্যাপ্তি হবে (১০ – ১)+১ = ১০। শ্রেণিব্যাপ্তি সবসময় সমান রাখাই শ্রেয়।

শ্রেণিসংখ্যা (Class number) নির্ণয়ঃ

শ্রেণিসংখ্যা হচ্ছে পরিসরকে যতগুলো শ্রেণিতে ভাগ করা হয় তার সংখ্যা।

অর্থাৎ শ্রেণিসংখ্যা = পরিসর / শ্রেণিব্যাপ্তি  (পূর্ণসংখ্যায় রূপান্তরিত)

শ্রমিকদের ঘণ্টাপ্রতি মজুরির (টাকায়) পরিসর = ৩৩, মনে করো শ্রেণিব্যাপ্তি = ৫

সুতরাং শ্রেণিসংখ্যা =   = ৬.৬ ≈ ৭ (পরবর্তী পূর্ণসংখ্যায় রূপান্তরিত)। [আসন্ন মান বা প্রায় বোঝাতে≈ চিহ্নটি ব্যবহার করা হয়]

এখন একটি জটিল প্রশ্নের উত্তর দাও দেখি। শ্রেণিসংখ্যা হিসাবে ৬.৬ এর পরবর্তী পূর্ণসংখ্যা ৭ কেন নেওয়া হল? এর পরিবর্তে পূর্ববর্তী পূর্ণসংখ্যা ৬ নিলে কি সারণি তৈরি করতে কোন সমস্যা হত বলে তুমি মনে করো? উপাত্তের সংখ্যাসূচক তথ্যরাশির মান কোনো না কোনো শ্রেণিতে পড়বে। শ্রেণির বিপরীতে প্রতিটি সাংখ্যিক মানের জন্য ট্যালি চিহ্ন দিতে হয় এবং এর মাধ্যমে গণসংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। যে শ্রেণিতে যতগুলো ট্যালি চিহ্ন পড়বে তত হবে ঐ শ্রেণির গণসংখ্যা, যা গণসংখ্যা কলামে লিখতে হয়।

এবার চলো ঐ ৬০ জন শ্রমিকের মজুরির গণসংখ্যা নিবেশন সারণি তৈরি করি। তোমার জন্য দুইটি করে দেওয়া আছে।

একক কাজ : 

তোমার সহপাঠীরা আগের সপ্তাহে প্রত্যেকে মোট কত ঘণ্টা টেলিভিশন দেখেছে, সেই তথ্য সংগ্রহ করো। তারপর শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে অবিন্যস্ত উপাত্তসমূহের গণসংখ্যা নিবেশন সারণি তৈরি করে বিষয় শিক্ষককে দেখাও। 

প্রকৃত শ্রেণিসীমা নির্ণয়ঃ

তোমাদের দলগত কাজটি করতে পারার জন্য শ্রেণিসীমা এবং প্রকৃত শ্রেণিসীমা নির্ণয় করতে শেখা জরুরী। কোনটি কী সেটি বলে না দিয়ে এসো আমরা একটি দলগত কাজের মাধ্যমে বুঝে দেখি।

দলগত কাজ: কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে শ্রেণির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ওজন (কিলোগ্রামে) পরিমাপ করো। তারপর প্রাপ্ত ওজন সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর নামের পাশে লিখে একটি তালিকা তৈরি করো।

তোমাদের ক্লাসের সকল শিক্ষার্থীর প্রত্যেকের ওজন (কেজিতে) মেপে যে উপাত্তগুলো পেয়েছিলে, তার শ্রেণিবিন্যাসকৃত গণসংখ্যা সারণির গণসংখ্যা বা শিক্ষার্থীর সংখ্যার খালি ঘরগুলো পূরণ করো।

শ্রেণিব্যাপ্তি বা ওজন (কেজিতে)

গণসংখ্যা বা শিক্ষার্থীর সংখ্যা

৩১ ৩৫

 

৩৬-৪০

 

৪১ - ৪৫

 

৪৬ – ৫০

 

৫১ – ৫৫

 

৫৬ - ৬০

 

৬১ – ৬৫

 

৬৬ - ৭০

 

মোট

 

এখন যদি ৪৫.৫ কেজি এবং ৫০.৫ কেজি ওজনের দুইজন শিক্ষার্থী তোমাদের ক্লাসে নতুন ভর্তি হয়, তবে কোন শ্রেণিতে তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত করবে? নতুন শ্রেণি তৈরি করে তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে না। আবার ৪১ – ৪৫ বা ৪৬– ৫০ শ্রেণিতেও অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে না। যেহেতু পরপর দুইটি শ্রেণির উচ্চসীমা ও নিম্নসীমার মধ্যে ১ পার্থক্য রয়েছে, সেহেতু ৪৫.৫ এবং ৫০.৫ উপাত্ত দুইটি কোনো শ্রেণিতেই অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। এমতাবস্থায় পার্থক্য ১ কে সমান দুইভাগে (১ ২ = ০.৫) ভাগ করে ভাগফল প্রতিটি শ্রেণির উচ্চসীমার সাথে যোগ এবং নিম্নসীমা থেকে বিয়োগ করে প্রকৃত শ্রেণিসীমা নির্ণয় করতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ, মনে করো ৪১ ৪৫ এবং ৪৬ – ৫০ দুইটি শ্রেণি

৪১ – ৪৫ শ্রেণির উচ্চসীমা = ৪৫ এবং ৪৬ ৫০ শ্রেণির নিম্নসীমা = ৪৬

সুতরাং উচ্চসীমা ও নিম্নসীমার পার্থক্য (৪৬ – ৪৫) = ১

অতএব, পার্থক্যের অর্ধেক ( ১ ÷ ২ ) = ০.৫

সুতরাং ৪১ – ৪৫ এর প্রকৃত শ্রেণিব্যাপ্তি হবে = (৪১ - ০.৫) – (৪৫ + ০.৫) অর্থাৎ ৪০.৫ – ৪৫.৫

একইভাবে ৪৬ ৫০ এর প্রকৃত শ্রেণিব্যাপ্তি হবে (৪৬ - ০.৫) – (৫০ + ০.৫) অর্থাৎ ৪৫.৫ - ৫০.৫ এক্ষেত্রে তোমাদের ক্লাসের শিক্ষার্থীদের ওজনের প্রকৃত শ্রেণিব্যাপ্তি নিম্নরূপ হবেঃ 

শ্রেণিব্যাপ্তি বা ওজন (কেজিতে)

প্রকৃত শ্রেণিব্যাপ্তি

৩১ - ৩৫

৩০.৫ - ৩৫.৫

৩৬ - ৪০

৩৫.৫ - ৪০.৫

৪১ - ৪৫

৪০.৫ - ৪৫.৫

৪৬ - ৫০

৪৫.৫ - ৫০.৫

৫১ – ৫৫

৫০.৫ - ৫৫.৫

৫৬ - ৬০

৫৫.৫ - ৬০.৫

৬১ – ৬৫

৬০.৫ - ৬৫.৫

৬৬ - ৭০

৬৫.৫ - ৭০.৫

এখন তোমার পক্ষে নতুন শিক্ষার্থীদের ওজন সারণিতে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব। কিন্তু তাদের ওজন অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে আর কোনো সমস্যা দেখতে পাচ্ছো কি? লক্ষ করে দেখো ৪০.৫ -৪৫.৫ এবং ৪৫.৫ – ৫০.৫ উভয় শ্রেণিতেই ৪৫.৫ আছে।

তোমার মতে, কোন শ্রেণিতে ৪৫.৫ কে বিবেচনা করা উচিত? যদি তুমি উভয় শ্রেণিতে ৪৫.৫ কে অন্তর্ভুক্ত করো, তবে ৪৫.৫ দুইবার গণনা করা হবে। সেজন্য, নিয়ম অনুসারে ৪৫.৫ কে ৪৫.৫ - ৫০.৫ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ৪০.৫ - ৪৫.৫ শ্রেণিতে নয়। এবার ভেবে বলতো, ৫০.৫ কে কোন শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে?

সুতরাং ৪৫.৫ কেজি এবং ৫০.৫ কেজি ওজন দুইটি যথাক্রমে ৪৫.৫ – ৫০.৫ এবং ৫০.৫ – ৫৫.৫ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

তাহলে নতুন গণসংখ্যা নিবেশন সারণিটি হবে –

শ্রেণিব্যাপ্তি বা ওজন (কেজিতে)

প্রকৃত শ্রেণিব্যাপ্তি

গণসংখ্যা বা শিক্ষার্থীর সংখ্যা

৩১ - ৩৫

৩০.৫ - ৩৫.৫

 

৩৬ - ৪০

৩৫.৫ - ৪০.৫

 

৪১ – ৪৫

৪০.৫ - ৪৫.৫

 

৪৬ - ৫০

৪৫.৫ - ৫০.৫

 

৫১ - ৫৫

৫০.৫ - ৫৫.৫

 

৫৬ - ৬০

৫৫.৫ - ৬০.৫

 

৬১ – ৬৫

৬০.৫ - ৬৫.৫

 

৬৬ - ৭০

৬৫.৫- ৭০.৫

 

মোট

 

একক কাজ:

গণসংখ্যা নিবেশন সারণিটি পর্যবেক্ষণ করো এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। এটি একটি কারখানার ৬৫০ জন শ্রমিকের দৈনিক আয়ের গণসংখ্যা নিবেশন সারণি

শ্রেণিব্যাপ্তি (দৈনিক আয় টাকায়)

গণসংখ্যা (শ্রমিকের সংখ্যা)

৫০০ – ৬০০

৪৫

৬০০-৭০০

৫০

৭০০ - ৮০০

৯০

৮০০ - ৯০০

১৫০

৯০০ -১০০০

২০০

১০০০ – ১১০০

৫০

১১০০ – ১২০০

৩৫

১২০০ – ১৩০০

২০

১৩০০ - ১৪০০

মোট

৬৫০

ক. শ্রেণিব্যাপ্তি কত? 

খ. কোন শ্রেণির গণসংখ্যা সবচেয়ে বেশি? 

গ. কোন শ্রেণির গণসংখ্যা সবচেয়ে কম? 

ঘ. ৯০০ – ১০০০ শ্রেণির উচ্চসীমা কত? 

ঙ. কোন দুইটি শ্রেণির গণসংখ্যা সমান?  

একক কাজ:

শিক্ষকের সহায়তায় উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ এবং বিশ্লেষণের বেশ কিছু কাজ তোমরা ইতমধ্যে শিখে ফেলেছো। এই পর্যায়ে তোমাদের একটি একক কাজ করা দরকার।

তোমার প্রতিবেশিদের মাঝে ২০ জনের রক্তচাপ (blood pressure) সংগ্রহ করো। তারপর নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখে বিষয় শিক্ষকের নিকট পরবর্তী ক্লাসে জমা দাও।ক. সংগ্রহ করা দুই ধরনের উপাত্তের কোনগুলো বিচ্ছিন্ন এবং কোনগুলো অবিচ্ছিন্ন? যুক্তিসহ ব্যাখ্যা করো। 

খ. কোন ধরনের উপাত্তের গণসংখ্যা নিবেশন সারণি তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রকৃত শ্রেণিসীমা প্রয়োজন হয় এবং কেন? 

গ. দুই ধরনের উপাত্তেরই পরিসর নির্ণয় করো। 

ঘ. উপযুক্ত শ্রেণিব্যাপ্তি নিয়ে উপাত্তের শ্রেণিসংখ্যা নির্ণয় করো। 

ঙ. উপযুক্ত শ্রেণিব্যাপ্তি নিয়ে তোমার সহপাঠী প্রত্যেকের পারিবারের লোকসংখ্যাকে গণসংখ্যা নিবেশন সারণির মাধ্যমে উপস্থাপন করো। 

চ. উপযুক্ত প্রকৃত শ্রেণিব্যাপ্তি নিয়ে প্রতিবেশিদের রক্তচাপের গণসংখ্যা নিবেশন সারণি তৈরি করো।

উপাত্ত লেখচিত্রে উপস্থাপন (Graphical Representation of Data)

টেবিল বা সারণির মাধ্যমে তথ্য উপস্থাপন আমরা ইতিমধ্যে আলোচনা করলাম। এবার চলো তথ্যকে আরো একটি উপায়ে উপস্থাপনের চিন্তা করি। অর্থাৎ তথ্য বা উপাত্ত ছবির মাধ্যমে বা লেখচিত্রে উপস্থাপন। কেননা কথায় বলে, একটি ছবি হাজার শব্দের সমান। হাজার শব্দের প্রতিবেদনে যে কথাটি ফুটিয়ে তোলা যায় না, অনেক সময় একটি ছবিই সেই ভাবটি সম্পূর্ণভাবে ফুটিয়ে তোলে। তাছাড়া তথ্য ও উপাত্ত লেখচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন একটি বহুল প্রচলিত পদ্ধতি।

স্তম্ভলেখ (Bar Graph) 

মৃদুল তার মা-বাবার সাথে প্রতি বছর কোথাও না কোথাও ঘুরতে যায়। ঘোরার খরচ সামলে ওঠার জন্য অবশ্য ওরা সারা বছর ধরে অর্থ সঞ্চয় করে। মৃদুলের বাবা একটি লাল মলাট করা খাতায় প্রতি মাসের আয় ও খরচের হিসাব লিখে রাখেন। মজার ব্যাপার হলো প্রতি মাসের শেষে তিনি বাড়ির সবাইকে নিয়ে বসে একটি ছবি-ও আঁকেন। ছবি আঁকার সময় বলেন যে এই ছবি দেখে এক ঝলকেই বলে দেওয়া যায় কোন খাতে খরচ বেশি হচ্ছে এবং কতটা কমাতে হবে। এ ছাড়াও পরবর্তী মাসের খরচ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় এবং কতটা সঞ্চয় করা সম্ভব তা অগ্রিম ধারণা করা যায়। পরবর্তী পৃষ্ঠার ছবিটিতে মৃদুলদের পারিবারিক হিসাবের খাতার ছবিটি দেওয়া আছে

চিত্রটি দেখার পর মৃদুলের মনে পরে, এই ধরনের চিত্র সে পূর্বের শ্রেণিতে দেখেছে যার নাম স্তম্ভলেখ বা সরল  

স্তম্ভলেখ। মৃদুল লক্ষ করে তার বাবার আঁকা চিত্রটিতে তাদের পরিবারের এক মাসের পারিবারিক খরচের তথ্য ও উপাত্ত উপস্থাপন করা আছে ।

মৃদুলের বাবার আঁকা চিত্রটি তোমরাও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করো এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খাতায় লিখ।

ক. লেখচিত্রটির নাম কি? 

খ. লেখচিত্রটি থেকে কোন ধরনের তথ্য ও উপাত্ত পাওয়া যাবে? 

গ. লেখচিত্রটিতে উলম্ব বরাবর প্রতি একক কত ধরা হয়েছে? 

ঘ. সংশ্লিষ্ট মাসে কোন খাতে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে? 

ঙ. সংশ্লিষ্ট মাসে কোন খাতে সবচেয়ে কম খরচ হয়েছে? 

চ. শিক্ষা খাতে ঐ মাসে কত টাকা খরচ হয়েছিল?

ছ. তথ্য ও উপাত্ত লেখচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপনের সুবিধাগুলো কি কি?

একক কাজ:

তোমার পরিবারের যেকোনো এক মাসের পারিবারিক খরচের তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করো। তারপর খাতওয়ারী পারিবারিক খরচ স্তম্ভলেখের মাধ্যমে উপস্থাপন করে মূল্যায়নের জন্য পরবর্তী ক্লাসে বিষয় শিক্ষককের কাছে জমা দাও।

মৃদুল দেখে, খাতায় আরো একটি চিত্র আছে। মৃদুল নিজের খাতায় অনুরূপ একটি চিত্র আঁকে, যা দেখতে নিচের মতো

চিত্রটি আঁকার পর মৃদুল দেখতে পায়, চিত্রের প্রতিটি খাতে দুইটি করে স্তম্ভ পাশাপাশি আঁকা হয়েছে। তাহলে এ ধরনের স্তম্ভলেখকে যৌগিক স্তম্ভলেখ বলা যেতে পারে। সে আরো দেখতে পায়, লেখচিত্রে দুই মাসের খাতওয়ারী পারিবারিক খরচের তথ্য ও উপাত্ত পাশাপাশি উপস্থাপন করা হয়েছে। মজার বিষয় হলো, চিত্র   থেকে সহজেই দুই মাসের খাতওয়ারী পারিবারিক খরচের পার্থক্য নির্ণয় করা যাচ্ছে। মৃদুল মনে মনে স্থির করে, ঐ দুই মাসের খাতওয়ারী পারিবারিক খরচের পার্থক্যের কারণগুলো সে বাবার কাছ থেকে জেনে নিবে।

যদি কেউ তিন বা চার মাসের খরচের তুলনামূলক চিত্র একসাথে দেখতে চায়, তবে এভাবে তিনটি বা চারটি স্তম্ভ পাশাপাশি এঁকে তথ্য ও উপাত্তগুলো উপস্থাপন করলেই হবে।

একক কাজ

তোমার পরিবারের পরপর তিন মাসের খাত ওয়ারী পারিবারিক খরচের তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করো। তারপর যৌগিক স্তম্ভলেখ অঙ্কন করে তথ্যগুলো উপস্থাপন করো এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখ।

ক. স্তম্ভলেখটি থেকে তুমি কী কী তথ্য ও উপাত্ত পেয়েছ? 

খ. বিভিন্ন খাতে খরচের তারতম্যের কারণগুলো ব্যাখ্যা করো। 

গ. "পারিবারিক খরচের সুষম বাজেট তৈরিতে যৌগিক স্তম্ভলেখ বিশেষ ভূমিকা রাখে"- তোমার মতামতসহ ব্যাখ্যা করো।

আয়তলেখ (Histogram)

নিচের চিত্র দুইটি ভালোভাবে লক্ষ করো:

জোড়ায় কাজ: সহপাঠীর সাথে আলোচনা করে উপরের চিত্র দুইটির মধ্যে মিল ও অমিলগুলো খুঁজে বের করে পাঠ্য বইয়ের নির্ধারিত স্থানে লেখো। তারপর যেকোনোরে একজন তোমাদের পর্যবেক্ষণ শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করো। অন্যান্য সহপাঠীদের কাছ থেকে যে ফিডব্যাক আসবে তা অপরজন পাঠ্যবই বা খাতায় লিখ।

(ক) ও (খ) চিত্র দুইটির মধ্যকার মিলগুলো হলো:

(ক) চিত্র

(খ) চিত্র

 

 

 

 

 

 

 

 

(ক) ও (খ) চিত্র দুইটির মধ্যকার অমিলগুলো হলো:

(ক) চিত্র

(খ) চিত্র

 

 

 

 

 

 

তোমাদের পর্যবেক্ষণ ও আলোচনার পর আমরা বলতে পারি, (খ) চিত্রের স্তম্ভগুলো পাশাপাশি আঁকা হয়েছে। অর্থাৎ পাশাপাশি স্তম্ভগুলোর মধ্যে কোনো ফাঁক নিই। অনুভূমিক বা x – অক্ষ বরাবর প্রকৃত শ্রেণিব্যাপ্তি এবং উলম্ব বা y – অক্ষ বরাবর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বা গণসংখ্যা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি স্তম্ভ বা আয়তের প্রস্থ বা ভূমি হলো শ্রেণিব্যাপ্তি এবং উচ্চতা বা দৈর্ঘ্য হলো গণসংখ্যা। তথ্য ও উপাত্ত এ ধরনের লেখচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলে, তাকে আয়তলেখ (Histogram) বলা হয়। Histogram শব্দটি ইংল্যান্ডের গণিতবিদ কার্ল পিয়ারসন সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন।

আয়তলেখে প্রতিটি আয়তের ক্ষেত্রফল সংশ্লিষ্ট আয়তের গণসংখ্যার সমানুপাতিক। আবার আয়তক্ষেত্রগুলোর প্রস্থ সব সমান বলে, আয়তক্ষেত্রগুলোর দৈর্ঘ্য গণসংখ্যার সমানুপাতিক হবে। এই কারণেই আমরা শুধু দৈর্ঘ্য এঁকে থাকি। নিচের আয়তলেখটি লক্ষ করো:

উপরের আয়তলেখটি পর্যবেক্ষণ করে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

ক. কতজন শিক্ষকের বয়স ৫০ বছরের বেশি কিন্তু ৫৫ বছরের কম? 

খ. কতজন শিক্ষকের বয়স ৪৫ বছরের কম?

একক কাজ:

ক. তোমার প্রতিবেশি পরিবারগুলোর বিভিন্ন বয়সের (বছরে) লোকজনের তথ্য সংগ্রহ করে ছকটি পূরণ করো

খ. তৈরি করা ছক অনুসারে আয়তলেখ অঙ্কন করো। 

গ. কোন শ্রেণিব্যাপ্তিতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লোকজনের অবস্থান তা আয়তলেখ থেকে নির্ণয় করো।

পাইচিত্র (Pie Chart or Circle Graph)

উপাত্তকে চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করার আরেকটি উপায় হলো পাই চার্ট বা পাই চিত্র। অনেকেই হয়তো জানো পাই (pie) কী? পাইকে বলতে পারো বিদেশি এক ধরনের পিঠা। এগুলো বৃত্তাকার এবং পুরু হয়ে থাকে। নিচের ছবিতে দেখো পাই দেখতে কেমন হয়।

জিভে জল এসে গেলো তো? পাই খেতে আসলেও মজাদার। লক্ষ করো এটি কেমন করে কেটেছে। পাইয়ের মত আরও কিছু গোলাকার খাবার অবশ্য আমাদের চেনার কথা। আমরা চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা খেয়ে থাকি। চিতই ও ভাপা পিঠা কিন্তু বৃত্তাকার। আবার ইতালির খাবার পিজ্জাও বৃত্তাকার। ভাবছো যে হঠাৎ বৃত্তাকার খাবার নিয়ে এত কথা কেন? তার আগে নিচের খাবারের ছবিগুলো দেখে নাও, এর পর একটি ছোট কাজ রয়েছে।

এখন মনে কর তুমি আর তোমার বন্ধু রাতুল কোন একটি গোলাকার খাবার ভাগাভাগি করে খাচ্ছো, হতে পারে চিতই পিঠা, অথবা পিজ্জা, অথবা পাই। নিচের প্রথম ছবিটি দেখে ফাঁকা ঘরে লেখো তুমি কত ভাগ পেয়েছো আর রাতুল কত ভাগ পেয়েছে। কিছুক্ষণ পর তোমরা পিঠা খাবে, তোমাদের সাথে যোগ হলো  

তোমাদের আরেক বন্ধু সুমি। দ্বিতীয় ছবিটি দেখে ফাঁকা ঘরে লেখো কে কত ভাগ পেলো।

রাতুলের ভাগঃ    %

তোমার ভাগঃ     %

উপরের কাজটি থেকে বৃত্তকে ভাগ করে শতকরা বুঝানো হচ্ছে ধরতে পেরেছো নিশ্চই? একটি পাই বা পিজ্জাকে যেমন নির্দিষ্ট উপায়ে সমান বা অসমান অনেক ভাগে ভাগ করা যায়, যে কোন বৃত্তকেও তেমন অনেক ভাগে ভাগ করা সম্ভব। বৃত্তকে ত্রিকোণাকৃতিতে ভাগ করে শতকরা দ্বারা প্রকাশ করার এই পদ্ধতিকে বলে পাই গ্রাফ বা পাই চিত্র।

নিচে কয়েকটি পাইচিত্র দেওয়া আছে যেগুলোতে একটি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন তথ্য রয়েছে। চলো চেষ্টা করে দেখি সেগুলিকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব কি না।

একক কাজ:

উপরের পাইচিত্রগুলি দেখে ঐ ক্লাসের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কী কী জানতে পারলে তা ৫-১০ লাইনের মধ্যে নিচের ফাঁকা ঘরে লেখো।

 

 

 

এবার এসো দেখি, পাইচিত্র কীভাবে তৈরী করে। আমরা জানি, বৃত্তের কেন্দ্রে সৃষ্ট কোণের পরিমাণ ৩৬০০। আর, বৃত্তের প্রতিটি অংশের কেন্দ্রিয় কোণ হবে ৩৬০০ এর ভগ্নাংশ। কোনো পরিসংখ্যান ৩৬০০ এর অংশ হিসেবে উপস্থাপিত হলে তা হবে পাইচিত্র।

আব্রাহাম সপ্তম শ্রেনির ২৫০ জন শিক্ষার্থীর পছন্দের ফলের তথ্য সংগ্রহ করে যা নিচের সারণিতে দেখানো হলো

পছন্দের ফল

আম

কাঁঠাল

লিচু

পেয়ারা

কলা

মোট

শিক্ষার্থীর সংখ্যা

৭০

৩০

৮০

২০

৫০

২৫০

চলো, আব্রাহামের সংগ্রহ করা উপাত্ত পাইচিত্রের মাধ্যমে দেখানোর জন্য আমরা একটি সারণি তৈরি করি।

চাঁদার সাহায্যে বৃত্তের প্রতিটি অংশের কেন্দ্রিয় কোণ পরিমাপ করি। এবার উপরের সারণি অনুসারে চলো একটি পাইচিত্র অঙ্কন করি এবং তথ্য ও উপাত্তগুলো চিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করি ।

একক কাজ:

তোমার পরিবারের সকলের বয়স (বছরে) জেনে নাও। সকলের বয়সের উপাত্ত নিয়ে সারণি তৈরি করো। তারপর সারণি ব্যবহার করে পাইচিত্র আঁক এবং উপস্থাপন করো।

জোড়ায় কাজ:

চিত্রে সুমন চাকমার এক মাসের সঞ্চয়সহ পরিবারের বিভিন্ন খাতের খরচ দেখানো হলো। চিত্রটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করো এবং আলোচনা করে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

ক. সুমন চাকমা ৩০০০ টাকা সঞ্চয় করে। সঞ্চয় বাদে ঐ মাসে সুমন চাকমার মোট কত টাকা খরচ হয়? 

খ. শিক্ষাবাবদ তার কত টাকা খরচ হয়? 

গ. কোন খাতে সুমন চাকমার সবচেয়ে বেশি খরচ হয় এবং কত টাকা খরচ হয়? 

ঘ. পাইচিত্রের প্রতিটি অংশের কেন্দ্রিয় কোণ নির্ণয় করো।

একক কাজ

১। তুমি তোমার দৈনন্দিন জীবন থেকে ১০টি তথ্য সংগ্রহ করো। তথ্যগুলোকে ট্রি-এর মাধ্যমে শ্রেণিবদ্ধ করো। 

২। তোমার বাড়ি বা বাসার চারপাশ ঘুরে দেখো, সেখানে বিভিন্ন প্রকারের গাছপালা আছে। তুমি কি সবগুলো গাছের নাম জানো? প্রয়োজনে অভিভাবকের সাহায্য নাও। এবার দেখো, কোন প্রকারের কয়টি করে গাছ আছে। তুমি চাইলে গাছগুলো ছবিও আঁকতে পারো। এমনকি গাছগুলোর আনুমানিক উচ্চতা তোমার পছন্দমতো এককে লিখে রাখতে পারো। ট্যালি চিহ্ন ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকার গাছের সংখ্যা এবং গাছগুলোর মোট সংখ্যা লিখে নিচের ছকটি পূরণ করো।

গাছের নাম

ট্যালি চিহ্ন

আনুমানিক উচ্চতা

সংখ্যা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

ক. কোন গাছটি সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দেখেছো? 

খ. কোন গাছটি সবচেয়ে কম সংখ্যক দেখেছো? 

গ. মোট কতগুলো গাছ আছে? 

ঘ. তোমার দেখা কোন গাছটির উচ্চতা সবচেয়ে বেশি এবং কত? 

ঙ. তোমার দেখা কোন গাছটির উচ্চতা সবচেয়ে কম এবং কত? 

চ. ছক থেকে প্রাপ্ত গাছের নাম ও গাছের সংখ্যা ব্যবহার করে স্তম্ভলেখ অঙ্কন করো। 

ছ. গাছের উচ্চতার পরিসর নির্ণয় করো। 

জ. উপযুক্ত শ্রেণিব্যাপ্তি নিয়ে গাছের উচ্চতার শ্রেণি সংখ্যা নির্ণয় করো। 

ঝ. খাতায় নিচের মতো একটি ছক তৈরি করে ছকটি পূরণ করো এবং ছক অনুযায়ী আয়তলেখ অঙ্কন করো।

গাছের উচ্চতা বা শ্রেণিব্যাপ্তি (তোমার লেখা একক অনুসারে)

প্রকৃত শ্রেণিব্যাপ্তি

উচ্চতাগুলো

সংখ্যা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

৩। মিনার ক্লাসের বন্ধুরা অবসর সময়ে কি কি কাজ করে তাদের মাতা-পিতাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে তার একটি তালিকা তৈরি করে, যা নিম্নরূপঃ

কাজের নাম

বন্ধুদের সংখ্যা

বাজার করে

১৫

কাপড় কাঁচে

ঘর পরিস্কার করে

খাবার তৈরি ও পরিবেশন করে

১২

গৃহপালিত পশুদের পরিচর্যা করে

কৃষি কাজ করে

১০

মোট

 ___________

ক. উপরের ছকটি ব্যবহার করে পাইচিত্র অঙ্কন করো। 

খ. মিনার মতো তোমার ক্লাসের বন্ধুরা অবসর সময়ে কি কি কাজ করে তাদের মাতা-পিতাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে তার একটি তালিকা তৈরি করো এবং তা পাইচিত্রে প্রদর্শন করো।

8. একটি কারখানার ৩০ জন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি (টাকায়) দেওয়া হলো: ৭২০, ৫৫০, ৬৩০, ৭০০, ৬৫০, ৫০০, ৮৫০, ৬৫০, ৭৫০, ৫৭৫, ৬৮০, ৯২০, ৬৫০, ৮২০, ৯৩০, ৯৯০, ৭৬০, ৮৪০, ৬৫০, ৫৮০, ৯০০, ৮৪০, ৭৬০, ৮৫০, ৯৫০, ৫৫০, ৯৯০, ৭৬০, ৮২০, ৮৯০, ৯৭৫, ৬৭৫, ৬৯০, ৭৫০, ৯৪০, ৬৫০, ৭৪০, ৮৬০, ৮৭৫, ৯৮০ 

ক. উপাত্তের পরিসর নির্ণয় করো।

খ. ৫৫০ – ৫৯৯, ৬০০ – ৬৪৯, ৬৫০ – ৬৯৯, শ্রেণিগুলোর শ্রেণিব্যাপ্তি কত? 

গ. 'খ' এ প্রাপ্ত শ্রেণিব্যাপ্তি অনুসারে উপাত্তের শ্রেণি সংখ্যা নির্ণয় করো। 

ঘ. ট্যালিচিহ্ন ব্যবহার করে গণসংখ্যা সারণি তৈরি করো এবং আয়তলেখ অঙ্কন করো। 

ঙ. কতজন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৮০০ টাকার বেশি, আয়তলেখ থেকে নির্ণয় করো।

৫. নিচে ৮০ জন শিক্ষার্থীর দৈনিক পড়ালেখার সময়ের (ঘণ্টায়) একটি লেখচিত্র দেওয়া হলো। লেখচিত্রটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করো এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

ক. নিচের লেখচিত্রটির নাম কি? এর বৈশিষ্ট্যগুলো লিখ।

খ. সর্বাধিক কত ঘণ্টা শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করে? 

গ. কতজন শিক্ষার্থী ৪ ঘণ্টার কম সময় পড়ালেখা করে? 

ঘ. কতজন শিক্ষার্থী ৫ ঘণ্টার বেশি সময় পড়ালেখা করে?

নিচের তথ্যগুলো ভালো করে লক্ষ্য করো, চিন্তা করো, প্রয়োজনে বন্ধুর সাথে আলোচনা করো। তারপর কোন ক্ষেত্রে কোন ধরনের লেখচিত্র অধিক প্রযোজ্য তা অঙ্কন করে যুক্তিসহ ব্যাখ্যা করো।

ক. তোমার ক্লাসের সকল শিক্ষার্থীর জন্মমাসের ছকটি পূরণ করো এবং লেখচিত্র অঙ্কন করো।

মাসের নাম

ট্যালিচিহ্ন

গণসংখ্যা

জানুয়ারি

 

 

ফেব্রুয়ারি

 

 

 

 

 

 

 

 

খ. এঞ্জেল, সুমিত, নিপা ও মিনতি কস্তার পরিবারের সদস্যদের ওজন (কেজিতে) নিম্নরূপঃ

৩০.২, ৮.৫, ১১.৬, ৪৫, ৩২.৮, ৬৫.৩, ৩৮.৪, ৪৮.৬, ৫৫.৫, ২৬.৯, ৪০.৮, ১৭.৬, ২২.৩, ৬৮.২, ৪৮.৫, ৫৬, ৬২, ৩৬.৪, ৬৭.৩, ৫২.৮

গ. কোনো এক জেলার উন্নয়ন পরিকল্পনায় বিভিন্ন খাতে বরাদ্ধকৃত টাকার শতকরা হিসাব নিম্নরূপঃ

খাত

কৃষি

শিল্প

যোগাযোগ

বিদ্যুৎ

শিক্ষা

অন্যান্ন

বরাদ্ধকৃত টাকা (শতকরায়)

৩০

২৫

১৫

১২

১০

৬। মতিন ৭২০ জন শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন করে জেনেছে তারা কীভাবে স্কুলে যাতায়াত করে। মতিন যে তথ্য পেল তার পাইচিত্রটি নিচে আঁকা হলো। চিত্রটি পর্যবেক্ষণ করো এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

ক. কতজন শিক্ষার্থী পায়ে হেঁটে স্কুলে আসে? 

খ. কতজন শিক্ষার্থী সাইকেলে চড়ে স্কুলে আসে? 

গ. রিকসায় আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা নির্ণয় করো।

৭। সপ্তম শ্রেণির দুইটি শাখার শিক্ষার্থীদের গণিতের পারদর্শিতা যাচাই করার জন্য গণিত শিক্ষক ১০০ নম্বরের একটি পরীক্ষা নিলেন। খাতা মূল্যায়নের পর তিনি দেখতে পেলেন কিছু শিক্ষার্থী ২০ নম্বরের কম এবং কিছু শিক্ষার্থী ৭০ নম্বরের বেশি পেয়েছে। তাই তিনি নম্বরগুলোকে ০ ২০, ২০ – ৩০, ৩০ - - ৪০, ....., ৭০ – ১০০ ব্যবধানে বিভক্ত করে নিচের সারণিটি তৈরি করলেন। সারণির উপাত্তের আয়তলেখ আঁক।

নম্বর

০ – ২০

২০-৩০

৩০-৪০

৪০-৫০

৫০-৬০

৬০-৭০

৭০- ১০০

গণসংখ্যা

১২

১৬

২০

১৫

২০

 

Content added By
Promotion